Skip to content

প্লাস্টিক এলো কী করে?

অনিমেষ অধিকারী

জলবায়ু পরিবর্তন বলি কিংবা পরিবেশ দূষণ, ফিরে এসে থামতে হয় প্লাস্টিক দূষণে। অথচ গল্পটা এমন হওয়ার কথা ছিলো না। ১৮৬৯ সালে জন ওয়েসলি হাইয়েট আইভরির বিকল্প খুঁজতে গিয়ে যখন পৃথিবীর প্রথম সিনথেটিক পলিমার আবিষ্কার করেন মানুষ জানতো না কী এক দুর্বিসহ ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তবে এই আবিষ্কারের পিছনে অবদান রয়েছে নিউ ইয়র্কের একটি ফার্মের। কেননা, মোটা টাকা অর্থাৎ তৎকালীন মুদ্রায় ১০ হাজার আমেরিকান ডলার পুরষ্কার ঘোষণা করেছিলো ফার্মটি। এর পিছনে অবশ্য ব্যাবসায়িক কারণ ছিলো যথেষ্ট। তবে হাইয়েটের আগে আলেকজান্ডার পার্ক নামক ব্রিটিশ এক বিজ্ঞানী ১৮৫৫ সালে সেমি সিনথেটিক পলিমার আবিষ্কার করেছিলেন। যার নাম ছিলো পার্কেসাইন।

বিলিয়ার্ড ছিলো তখনকার খুব জনপ্রিয় খেলা। আর বিলিয়ার্ড বলের যোগান দেয়া হতো হাতির দাঁত থেকে তৈরি আইভরি থেকে। এশিয়ান অঞ্চল থেকে হাতির দাঁত নিয়ে যাওয়া হতো পশ্চিমে। এর কদর ছিলো আলাদা। বিলিয়ার্ড বল ছাড়াও তৈরি হতো চিরুনী, পিয়ানোর কী ছাড়াও বহু ভোগ বিলাসের সামগ্রী। অভূতপূর্ব এই ছিলো এই আবিষ্কার। প্রাকৃতিক সম্পদের সীমাবদ্ধতায় মানুষ আর আঁটকে রইলো না। হাতির দাঁতের অভাবে আঁটকে থাকলো না কারখানাগুলো। হাইয়েটের আবিষ্কারের জন্য বেঁচে গিয়েছিলো লক্ষ হাতি, কচ্ছপসহ অন্যান্য জীবজন্তুর প্রাণ। শুধু কি তাই? নতুন এই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হতে লাগলো কচ্ছপের খোলস, বিভিন্ন জন্তুর শিং, লিনেনের মতো বস্তু। বুনো জন্তু কিংবা পরিবেশের জন্য আশীর্বাদ হিসেবেই গণ্য হতে লাগলো প্লাস্টিক।

এতো কেবল ঘটনার শুরু। ১৯০৭ সালে লিও হেন্ড্রিখ ব্যাকেলান্ড প্রাকৃতিক ইন্সুলেটর শেলাক (Lac Insect নামক এক ধরনের পোকার রেসিন) এর বিকল্প খুঁজতে গিয়ে আবিষ্কার করেন সম্পুর্ণ সিনথেটিক পলিমার (প্রকৃতিতে বিদ্যমান কোনো অণুই এতে উপস্থিত নয়) ব্যাকেলাইট। আমেরিকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য দীর্ঘস্থায়ি, তাপ কুপরিবাহী ইন্সুলেটর তখন খুবই প্রয়োজন ছিলো। আর সেদিক বিবেচনায় ব্যাকেলাইট অতুলনীয়। হাজারো কাজের ব্যবহার্য হিসেবে বাজারে চলতে লাগলো নতুন আবিষ্কৃত ব্যাকেলাইট। হাইয়েট ও ব্যাকেলান্ড-এর সফলতার পরেই প্লাস্টিক খাতের গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য বড় মাপের বিনিয়োগের প্রতিযোগিতা শুরু করলো বড় বড় সব কেমিক্যাল কোম্পানিগুলো।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৩৫ সালে ওয়ালেস ক্যারোথার্স আবিষ্কার করলেন নাইলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকায় এর উৎপাদন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৩০০% বেশি বৃদ্ধি পায়। তৈরি হতে থাকে প্যারাসুট, দড়ি, বর্ম, হেলমেটসহ নানান উপকরণ। বিমানের জানালার গ্লাসের জায়গা দখল করে নেয় প্লেক্সিগ্লাস।

বিশ্বযুদ্ধের পর শুরু হলো নতুন প্রতিযোগিতা। প্লাস্টিক দিয়ে কী কী তৈরি করা যায় তার দৌড় শুরু হয়ে গেলো। আজ প্লাস্টিক নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই প্লাস্টিক আধুনিক জীবনকে সহজ করে তুলেছে। কাপড়ের সুতা থেকে শুরু করে ইলেকট্রনিক গেজেটগুলো সব জায়গাতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা বাঁধা পরে গেছি প্লাস্টিকের বিষাক্ত বাঁধনে।

তথ্যসূত্র-

https://www.sciencehistory.org/the-history-and-future-of-pl…

https://americanhistory.si.edu/collec…/…/object/nmah_1065504

https://fr.wikipedia.org/wiki/Parkesine